২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, প্রতিটি শিশুই স্কুলে যাবে। একটি শিশুও ঝরে পড়বে না, রাস্তায় ঘুরবে না, টোকাই হবে না। পথশিশুরাও স্কুলে যাবে, পড়াশোনা করবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে কমলাপুর ও কারওয়ান বাজারে পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এই দুই কেন্দ্রে ১৬০ জনের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এর বাইরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পথশিশু সুরক্ষায় কিছু প্রকল্প চলমান। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা ও বরিশালে সাতটি পুনর্বাসনকেন্দ্র রয়েছে।
বেশির ভাগ পথশিশু পেটের দায়ে কাজ করে। পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির গত মাসের এক জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, দৈনিক গড়ে ১০ ঘণ্টা ভিক্ষা করে এসব শিশু। ৩৫ শতাংশ শিশু ভিক্ষা করার কথা স্বীকার করেছে। ৪২ শতাংশ শিশু রাস্তায় জিনিসপত্র বিক্রি করে। ৯৫.৫ শতাংশ পথশিশু প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক কোনো পড়াশোনা করছে না।
পথশিশুদের সহিংসতার চিত্র ভয়াবহ। যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনও চলে তাদের ওপর। ৭৯ শতাংশ শিশু জীবনের কোনো এক পর্যায়ে মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
ঢাকা ও বরিশালের ৪০০ শিশুর ওপর গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৭৬ শতাংশ শিশু মানসিক নিপীড়নের শিকার। এর মধ্যে পিতৃপরিচয় না থাকায় হেনস্তা হওয়া এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল শোনাসহ বিভিন্ন ধরনের কটূক্তির শিকার হয় তারা। এতে তাদের মানসিক পীড়ন হয়। শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৬২ শতাংশ পথশিশু।
লিডোর গবেষণায় উঠে এসেছে, ৬২ শতাংশ পথশিশু গণশৌচাগার ব্যবহার করে। ৩০ শতাংশ শিশু নর্দমা বা খোলা জায়গা ব্যবহার করে। ৩৫ শতাংশ শিশু কাশি, ২৬ শতাংশ শিশু সর্দি, ২৫ শতাংশ শিশু মাথা ব্যথা এবং ২২ শতাংশ শিশু পেটের পীড়ায় ভোগার কথা বলেছে। ৮৫ শতাংশ শিশু অসুখ-বিসুখে হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছে।